উন্নয়ন সমন্বয়ের পাবলিক লেকচারে ড. আতিউর রহমান
আজ ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ উন্নয়ন সমন্বয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জগুলির বিষয়ে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে “বছর শুরুর ভাবনা: বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে?” শীর্ষক একটি পাবলিক লেকচার আয়োজন করেছে। উক্ত লেকচারের বক্তব্য রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান। তিনি তাঁর বক্তব্যে নতুন বছরের ম্যাক্রো অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন ২০২৩ সালের অর্থনীতির প্রধানতম সমস্যা ছিল মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ধারাবাহিক টাকার অবমূল্যায়ন। তাই ২০২৪ সালে এসে এই মুদ্রাস্ফীতির নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে টাকা ও ডলারের বিনিময় হারকে একটি ‘স্মার্ট এক্সচেইঞ্জ রেট’ তৈরি করা প্রয়োজন। তাতে করে বিনিময় হারকে সত্যিকারের বাজারমূল্যে কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে এবং আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ভারসাম্য রক্ষার্থে রেমিটেন্স আয়কে অফিসিয়াল চ্যানেল দিয়ে নিয়ে আসতে হবে, যারা টাকা পাঠাচ্ছে তাদেরকে ২ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। কম রেমিটেন্স পাঠানো প্রবাসীদের ক্ষেত্রেও বেশি প্রণোদনা দেয়া গেলে অফিসিয়াল চ্যানেল ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন। অন্যদিকে, ফরেইন কারেন্সি বন্ডে বিনিয়োগ বাড়াতে নিয়ম কানুন শিথিল করতে হবে, এতে প্রবাসীদের বন্ড কেনার আগ্রহ বেড়ে যাবে।
ড. রহমান আরো বলেন, শেষ দশকে দেশের কৃষিখাতের যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে, সেখানে আগামী বছরেও এই অর্থনীতির রক্ষাকবচ কৃষির সুফলকে ধরে রাখতে হলে এই খাতে বিশেষ করে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি আয়ের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। অর্থনীতির আরেক চালিকা শক্তি এমএসএমই খাতকে প্রসার করার জন্য সরকার এমএসএমই খাতের উৎপাদিত পণ্যকে নিজেদের প্রকিউরমেন্ট পলিসিতে নিয়ে আসার বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে পারে, যাতে করে তরুণ উদ্যোক্তারা আরো বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।
মূল নিবন্ধ উপস্থাপনার পর প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, গত ১৪ বছরে প্রবাস আয় হয়েছে প্রায় ২৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আরো বেশি হতে পারতো, যদি দক্ষ জনশক্তি পাঠানো যেত। এছাড়া, ‘ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং’ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ্য করেন যে, ‘২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে সবচেয়ে বড় স্তম্ভ হচ্ছে স্মার্ট ইকোনমি, এবং সেটা তৈরি করতে হলে ক্যাশলেস ট্রানজেকশন সুবিধার বিস্তার করতে হবে।’ তিনি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইসের ট্যাক্সকে যুক্তিযুক্ত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরেক প্যানেল আলোচক বিআইডিএস-এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. এসএম জুলফিকার আলী বলেন, আগামী বছরে নতুন সরকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে করে ঝুকিঁপূর্ণ কিন্তু দরিদ্র নয় এমন জনগোষ্ঠী নতুন করে দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে না আসে। এবং আয় বৈষম্যও কমানোর দিকেও মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদিগণ ছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, ব্যাংকার, সাংবাদিক, উন্নয়ন কর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করার পাশাপাশি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন উন্নয়ন সমন্বয়ের ইমেরিটাস ফেলো ও বিআইজিডির ভিজিটিং ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী ।